২৪ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৪২

বিআইবিএমের কর্মশালায় বক্তারা

ব্যাংকের দুর্নীতি রোধে প্রধান বাধা শীর্ষমহল

ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে -ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান

ব্যাংকিং খাতে শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করা যাচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ অনিয়ম রোধে যত পরিদর্শন হয়, শেষ পর্যন্ত ওই পরিদর্শকদের টুঁটি চেপে ধরা হয়। এমনকি ভালো পরিদর্শকদের পদোন্নতি দেয়া হয় না। এ ধরনের লক্ষণ ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্টের (আইসিসিডি) গাইড লাইন ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের অনেক ধারা পরস্পরবিরোধী। তাই সাংঘর্ষিক নীতিগুলো সংশোধন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ড. শামসুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গৌতম প্রসাদ দাস প্রমুখ। মূল গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ মহীউদ্দিন ছিদ্দিকী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকিং খাতের বেশ কিছু জায়গায় সুশাসন না থাকায় অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। এ খাতকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু অনেক সময় দেখছি, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। ফলে কিছু কিছু অনিয়মের অভিযোগও উঠছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিপালন যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন থাকবে না। ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্ট (আইসিসিডি) ব্যাংকিং খাতের তৃতীয় নয়ন হিসেবে কাজ করে। তাই আইসিসিডিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
আইসিসিডির দুর্বলতার কারণে অনিয়ম হচ্ছে উল্লেখ করে ডেপুটি গভর্নর বলেন, সুশাসনের অভাবে ব্যাংকের শাখা থেকে ডিপোজিটরদের ২ হাজার কোটি টাকা প্রধান শাখায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বাইরের লোকজন এসে পর্ষদ সভা করছে। এগুলো ব্যাংকিং খাতের জন্য ভালো খবর নয়। এভাবে চলতে থাকলে ডিপোজিটরদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
নিজ নিজ জায়গা থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ব্যবস্থাপকদের নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাছাড়া অডিট ও আইসিসিডি ডিভিশনকেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সুপারভিশনের জন্য লোকবল কম উল্লেখ করে ডেপুটি গভর্নর আরও বলেন, সুপারভিশনের জন্য লোকবল মাত্র ৭৫০ থেকে ৮০০ জন। কিন্তু সারা দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা রয়েছে সাড়ে ১২ হাজার। তাই লোকবলের অভাবে সব ধরনের সুপারভিশনে কিছু কিছু দুর্বলতা রয়েছে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে বিআইবিএম অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিপালনের ওপর কর্মশালা করে আসছে। ব্যাংকিং খাতের গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টিতে ব্যাংকারদের আগ্রহ বাড়ছে।
সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, পরিদর্শকদের স্বাধীনতা দিতে হবে। বিশেষ করে আইসিসিডিকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া উচিত।
ব্যাংকের আইসিসিডিকে ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’ এই প্রবাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এভাবে কোনো পরিদর্শক বা নিয়ন্ত্রক দল হতে পারে না। অনিয়ম রোধে ব্যর্থতার দায় একা আইসিসিডির নয়। এর দায় নিতে হবে ব্যাংকের এমডি ও পরিচালনা পর্ষদকে। এমন অবস্থার পরিবর্তন না হলে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিনি বলেন, ব্যাংকারদের তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে। এটি করতে না পারলে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম রোধ করা কঠিন হবে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, যেসব ব্যাংকে অডিট বিভাগে জনবল কম আছে সেখানে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। শতভাগ সুশাসন বজায় রাখতে অডিট বিভাগকে শক্তিশালী এবং স্বাধীনতা দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংকের ভালো অডিটরদের পদোন্নতি দেয়া হয়নি। সে কারণে কেউ অডিট করতে চায় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ব্যাংকের গ্রাহকদের দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক যাবতীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। সর্বশেষ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিপালনও ঠিক এ দিক বিবেচনা করে করা হয়েছে। নিরীক্ষা বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে এ নীতিমালায়।
বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়ার আইসিসিডি বিভাগের প্রধান সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আইসিসিডি আইনে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। এসব দুর্বলতা দূর করলে ব্যাংকিং খাতে আরও সুশাসন জোরদার হবে।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/03/24/111591/