২২ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ৯:০৮

বিকল্প পদ্ধতিও অকার্যকর হয়ে পড়ছে

তিন দিকে পানি, তবু সুপেয় পানির সংকট

বরগুনার পাথরঘাটার পূর্বে বিষখালী নদী ও পশ্চিমে বলেশ্বর নদ, আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। তিন দিকেই অথই জলরাশি। তবু স্থানীয় লোকজনের কষ্ট—সুপেয় পানির অভাব। বৃষ্টির পানিই একমাত্র সমাধান।


২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর সুপেয় পানির বিকল্প উৎস হিসেবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পাথরঘাটার বিভিন্ন পুকুরপাড়ে ৫৮৯টি পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) বসিয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে ২১৪টি সচল, বাকিগুলো দিয়ে পানি শোধন হচ্ছে না। সাধারণত প্রথমে পুকুর থেকে পানি নলকূপের মাধ্যমে চৌবাচ্চায় সংগ্রহ করা হয়। এই চৌবাচ্চার নিচে থাকে বালু, খোয়া ও পাথর-নুড়ি। এসব উপকরণ ভেদ করে পরিশোধিত হওয়া পানি কলের পাত্রে সংগ্রহ করা হয়। এই পদ্ধতি পিএসএফ নামে পরিচিত।


গত সোমবার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের বাদুরতলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নুর আলমের বাড়ির লাগোয়া পিএসএফে নারী-শিশুসহ ১০ থেকে ১২ জন পানি নিতে অপেক্ষা করছেন। পানির চাপ কম থাকায় কেউ কেউ তাড়া দিচ্ছেন। দেরি দেখে কয়েকজন নারী পুকুর থেকেই পাত্র ভরে নিচ্ছেন।


তাঁদের মধ্যে কোহিনূর বেগম ও নাজমা বেগমের সঙ্গে আলাপ করি। তাঁরা বললেন, পিএসএফ প্রায়ই এ রকম অকেজো থাকে। তাই সরাসরি পুকুর থেকে পানি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।


সুপেয় পানির অভাবে সেখানকার লাখ দুয়েক মানুষ এভাবে পুকুর থেকে দূষিত এবং নদী থেকে লবণাক্ত পানি নিয়ে নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাচ্ছে। ফলে তারা নানা রোগবালাইয়ের শিকার হচ্ছে।


বিষখালীর তীরবর্তী পাথরঘাটা পৌর এলাকার মজিবুর রহমান বলেন, পেটব্যথা, ডায়রিয়া ও চর্মরোগের মতো সমস্যা মানুষের লেগেই থাকে। পৌরসভার ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং সদর ইউনিয়নের গহরপুর ওয়ার্ডের তিন শতাধিক পরিবারের গোসল ও পানীয়জলের বন্দোবস্তও ঠিকমতো নেই। এতে নারী ও শিশুদের কষ্ট বেশি। কেউ কেউ বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাওয়ার পানি বিক্রি করে। তবে সব সময় তাদের পাওয়া যায় না।


পাথরঘাটা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী দোলা মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, সংরক্ষণ ও তদারকির অভাবে পিএসএফ পদ্ধতিও এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিকল্প হিসেবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার বাড়াতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে লবণাক্ততা দূর করতে সুপেয় পানির তিনটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে।


উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় ২ হাজার ১০৮টি গভীর নলকূপের মধ্যে ২ হাজার ৬২টি সচল। আর ৯০৩টি অগভীর নলকূপের মধ্যে চালু আছে ৩৫৩টি। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে ২৩৩টি পাত্র দেওয়া হয়েছে। তবে ভৌগোলিক কারণে চরদুয়ানী, পাথরঘাটা সদর, কাঁঠালতলী, কালমেঘা ইউনিয়নের কিছু অংশে এবং পাথরঘাটা পৌরসভায় গভীর নলকূপ ও অগভীর নলকূপ বসানো যাচ্ছে না।


পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান, কাঁঠালতলী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মাধবী রানীসহ ১০ জন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে পানির এই সমস্যা নিয়ে আলাপ হয়। তাঁরা জানালেন, পানির কষ্ট-ভোগান্তি ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে কয়েক গুণ বেড়ে যায়।


এ বিষয়ে ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর খাইরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরগুনার পাথরঘাটাসহ সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মিষ্টি পানির অভাব রয়েছে। সরকার এরই মধ্যে ওই সব এলাকায় পুরোনো পুকুর সংস্কার এবং নতুন করে পুকুর কাটার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব পুকুর শুধু বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য নির্ধারিত থাকলেও, সেখানে মাছ চাষসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ড চালানো হয়। এতে পানি আর সুপেয় থাকে না। এ জন্য এসব পুকুর যেন শুধু সুপেয় পানির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।’

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1115992/