১৯ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ৮:৪৪

পাথরখেকো সিন্ডিকেটের নজর এখন ধলাই নদীতে

দিক বদল করেছে পাথরখেকো সিন্ডিকেটরা। তারা এখন লুটপাট চালাচ্ছে কালাইরাগ এলাকার ধলাই নদীতে। গতকালও ওই এলাকায় অন্তত ২০টি বোমা ও শ্যালো মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। গত কয়েক দিন ধরে অবাধে পাথর উত্তোলনের কারণে কালাইরাগ এলাকাও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে কোম্পানীগঞ্জের নতুন ইউএনও বেশ কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে বোমা ও শ্যালো মেশিন জব্দ করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কালাইরাগ এলাকা কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের টাকার খনিতে পরিণত হয়েছে। পুলিশ কালাইরাগ এলাকার প্রতিটি মেশিন থেকে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে পাচ্ছে। এতে করে পুলিশ প্রতিদিনই এক লাখ টাকা পাচ্ছে। এছাড়া পাথরখেকোদের কাছ থেকে পাচ্ছে আরো এক লাখ টাকা। এ কারণে ইউএনও অভিযান চালালেও পুলিশের সম্পৃক্ততা থাকায় কোনোভাবে পাথর অধ্যুষিত এলাকায় প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এডিএম আবু সাফায়াত মো. সাহেদুল করিম মানবজমিনকে জানিয়েছেন, কোম্পানীগঞ্জে তদন্তে সবকিছু উঠে এসেছে। জাফলংয়ে সব তদন্ত হবে। ঘটনার সঙ্গে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তারাও ছাড় পাবে না। বেলা-র কর্মকর্তা শাহ শাহেদা আক্তার অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অনেক আগে থেকেই আমরা করছি। কিন্তু প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ সম্পর্কে সজাগ না হওয়ায় শ্রমিকরা মারা যাচ্ছে। তবে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুজ্ঞান চাকমা জানিয়েছেন, কোয়ারি এলাকার মৃত্যুর মিছিল কমাতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। কোয়ারি এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে না। এছাড়া যারা জমি লিজ দিচ্ছে তারাও দায় এড়াতে পারে না। পুলিশের একার দোষ দিলে কোনোভাবেই মৃত্যুর মিছিল কমানো যাবে না। ওদিকে, কোম্পানীগঞ্জের শারপিন টিলা নিয়ে প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল জমির লিজের বিষয়টি। ২০০৯ সালের ১১ই নভেম্বর ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর অধীন ৭(৩) ধারার ক্ষমতা বলে স্মারক নং-পরিবেশ/প্রশা:/(ক্ষমতা অর্পণ)/২৪১/২০০২/৫০৯ তারিখ ১৯/০৮/২০০৯ খ্রি: মূলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রধান করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতিে ছিলেন শাবিপ্রবি সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. আকতারুল ইসলাম চৌধুরী, ভূ-তাত্ত্বিক ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক রেশাদ মো. ইকরাম আলী, তৎকালীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, শাবিপ্রবির পেট্রলিয়াম অ্যান্ড জিও রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জাকারিয়া, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো সংশিষ্ট উপপরিচালক মো. নুরুদ্দিন, বাংলাদেশ রাইফেল সিলেটের প্রতিনিধি মো. আবদুল কাদের ভূঁইয়া, বেলা সিলেটের প্রতিনিধি গবেষণা কর্মকর্তা জহরত রিশাত, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক (ভার.) মুহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম ও হযরত শাহ আরেফিন (র.) দরগাহ কমিটির সভাপতি জাহানারা বেগমকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। ওই তদন্তে শাহ আরেফিন টিলার ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ২৫৪ কোটি টাকা। বিপুল অঙ্কের এ সরকারি সম্পদ লুটের জন্য মেসার্স বশির কোম্পানি প্রোপাইটার মোহাম্মদ আলী নামের একটি কোম্পানিকে অভিযুক্ত করা হলেও আজ অবধি সেই ক্ষতিপূরণ আদায় হয়নি। সিলেটের জেলা প্রশাসনের কমর্কর্তারা জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাথর তুলে শাহ আরেফিন টিলার ১৩৭ দশমিক ৫০ একর ধ্বংস করা হয়েছে। সেখানকার ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলনের ফলে পাথর কোয়ারিগুলোর পরিবেশ ও আশপাশের জনবসতি হুমকির মুখে পড়ায় ২০১৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর শাহ আরেফিন টিলাসহ সিলেটের পাঁচ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এর আগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোয় সব ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে টিলা খনন করে বানানো হয়েছে ৫৭টি বিশাল গর্ত। ধ্বংস করা হয়েছে সেখানকার পরিবেশ । লুটে নেয়া হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পদ। এদিকে শারপিন টিলায় প্রশাসন রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার পর বশির কোম্পানির প্রোপাইটার মোহাম্মদ আলী কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওর কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন। আবেদনে তিনি নিজেকে বৈধ ইজারাদার দাবি করেন। তার যুক্তি পক্ষের কাগজপত্রও তিনি ইউএনওর কাছে দাখিল করেছেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, রাস্তা বন্ধ থাকায় তিনি ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=57940&cat=2/