১৭ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১০:২৭

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ইউরোপ

নেদারল্যান্ডসে প্রথম ধাক্কা খেল উগ্র জাতীয়তাবাদ, মুসলিমবিদ্বেষী নেতার পরাজয়

 

ইউরোপে উদীয়মান উগ্র জাতীয়তাবাদ প্রথম ধাক্কা খেল নেদারল্যান্ডসে। দেশটিতে সস্তা জনপ্রিয়তার (পপুলিজম) প্রচারণা চালানো কট্টর ডানপন্থীদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে পপুলিজমের বিপরীতে ভোটাররা আরেকবার বেছে নিলেন উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটকে। প্রায় সব ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, শরণার্থীবিদ্বেষী ও মুসলিমবিরোধী দল ফ্রিডম পার্টির (পিভিভি) চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে মার্ক রুটের পিপলস পার্টি ফর ফ্রিডম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (ভিভিডি)। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।


বুধবার ডাচ পার্লামেন্টের ১৫০টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৯০ শতাংশের বেশি ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, ভিভিডি পেয়েছে ৩৩টি আসন। আগেরবারের নির্বাচনের তুলনায় দলটি এবার ৮টি আসন কম পেয়েছে। অন্যদিকে ডানপন্থী গির্ট উইল্ডার্সের দল পিভিভি ২০টি আসনে জয় পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। আগেরবারের চেয়ে দলটি ৫টি আসন বেশি পেয়েছে। ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক দল (সিডিএ) এবং লিবারেল ডেমোক্রেটস ৬৬ (ডি-৬৬) প্রত্যেকেই ১৯টি করে আসনে জয় পেয়েছে। গ্রিন-লেফট পার্টি এবার ১০টি আসন বেশি পেয়ে জয় তুলেছে ১৪টি আসনে। তবে মার্ক রুট সরকারের কোয়ালিশনের একটি দল লেবার পার্টি রেকর্ড ২৯টি আসন হারিয়েছে। দলটি মাত্র ৯টি আসনে জয় পেয়েছে। নির্বাচনে ২৮টি দল অংশ নিয়েছিল। সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় ৭৬ আসন কেউ পায়নি। সে কারণে দেশটিতে কোয়ালিশন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে।

ভোটের মাঠে প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদী নেতা গির্ট উইল্ডার্স। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো স্লোগান নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি। ট্রাম্পের মতোই মুসলিম ও শরণার্থীবিরোধী হিসেবে পরিচিত। নেদারল্যান্ডসকে ফের মহান বানানোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন এ নেতা। কিন্তু ভোটাররা তার এ আহ্বানে সাড়া দেননি। নির্বাচনে জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর মার্ক রুট বলেন, ‘নির্বাচনে ডাচ ভোটাররা পপুলিজমের ভুল পন্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’ দ্য হেগে নির্বাচন-পরবর্তী এক বিজয় সমাবেশে উৎফুল্ল সমর্থকদের উদ্দেশ্যে রুট বলেন, ‘এটি প্রতীয়মান হচ্ছে, ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বারের মতো নেদারল্যান্ডসে ভিভিডিই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হতে যাচ্ছে। আজ রাতে সংক্ষিপ্ত উদযাপন করব আমরা।’ রুটের বিজয়ে উৎফুল্ল ইইউ নেতারা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

তাদের কয়েকজনের সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলেছেন রুট। তুরস্কের সঙ্গে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই নেদারল্যান্ডসের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল সরকার গঠনের সুযোগ পাচ্ছে। তবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ফ্যাসিস্ট উইল্ডার্সের সঙ্গে লিবারেল মার্ক রুটের কোনো পার্থক্য নেই। অপরদিকে জয়ের আশা করার পরও জয় না পাওয়াকে মেনে নিয়ে কঠিন বিরোধী দল হওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন উইল্ডার্স। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘বৃহত্তম দলই হতে চেয়েছি আমরা, কিন্তু দল হিসেবে আমরা হারিনি। আমরা অনেক আসনে জয় পেয়েছি। এ ফল গর্বিত হওয়ার মতো।’ নতুন সরকারকে সহযোগিতা করতে তার দল প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তার নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল- ইইউ ছাড়তে নেক্সিট কার্যকর, মুসলিমদের দেশছাড়া করা, কোরআন নিষিদ্ধ করা এবং ৪৫০ মসজিদ বন্ধের ঘোষণা। এএফপি লিখেছে, গিট উইল্ডার্সের ২০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময় জরিপে এগিয়ে ছিলেন। ২০১৭ সালে সেই স্বপ্ন আকাশ ছুঁয়েছিল। কিন্তু আবারও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। উইল্ডার্সের পরাজয়ের মাধ্যমে পুরো ইউরোপে উগ্র জাতীয়তাবাদের তেজ কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

http://www.jugantor.com/ten-horizon/2017/03/17/109688/