১৭ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১০:২১

এলডিসি থেকে বের হলে বিশ্ব বাণিজ্যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে

জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হলে বাংলাদেশকে বিশ্ব বাণিজ্যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে- এমনটাই পূর্বাভাস দিচ্ছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তারা মনে করছে, ২০২৪ সালে এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসতে পারে। তবে তালিকা থেকে বের হলেও পরবর্তী তিন বছর অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত এলডিসি হিসেবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে। ২০২৭ সালের পর বিশ্ব বাণিজ্যে শক্ত প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটি এ পূর্বাভাস দেয়। সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘স্বল্পোন্নত দেশের ধাপ পেরোনোর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এ আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আরও বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, জেমকন গ্রুপের পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং বাংলাদেশ নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালেই জাতিসংঘের এলডিসি তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার একটা সম্ভাবনা বাংলাদেশের আছে। আমরা আমাদের গবেষণায় দেখেছি, ২০১৮ সালে জাতিসংঘের যে পর্যালোচনাটি হবে, সেখানে বাংলাদেশ বেশ শক্তিশালী একটি অবস্থানে থাকবে। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের দিকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে বলে বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে। আর তা হলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেসব বাজারসুবিধা পায়, ২০২৭ সালের পর আর তা পাবে না। পাশাপাশি বৈদেশিক সাহায্যের শর্তও এরপর কঠিন হতে থাকবে।
তিনি বলেন, মধ্য আয়ের দেশে যেতে তিনটি সূচকের দুটিতে সাফল্য এসেছে, অন্যটি ২০২৪ সালের আগেই ভালো করা সম্ভব হবে। তবে এ জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশ ও বেসরকারি বিনিয়োগের হার বাড়ানোসহ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। নিয়ম অনুসারে মাথাপিছু আয়, মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ তিনটি সূচকের মধ্যে কমপক্ষে দু’টিতে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশ তিনটিই সফলভাবে উৎরাতে পারবে।
সিপিডি বলছে, শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি নিয়েই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হবে বাংলাদেশ। যা দেশের জন্য গর্বের বিষয়। ২০২৪ সালে মধ্য আয়ের দেশে যাওয়ার আগেই সব সূচকে যে কোনো দেশের চেয়ে ভালো করবে।
মূল প্রবন্ধে আরো বলা হয়, মধ্য আয়ের দেশে যাওয়ার পর যেসব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আসবে তা মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। পণ্য ও বাজার বহুমূখীকরণে জোর দিতে হবে। পণ্য বৈচিত্রকরণে মনযোগী হতে হবে, শিল্প ও কৃষিতে উৎপাদনশীললতা বাড়াতে হবে।
সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পর বাংলাদেশ কোনোভাবেই গরিব দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে না। এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের বের হয়ে আসা হবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে টেকসই, মসৃণ ও সফলতম ঘটনা।

http://www.dailysangram.com/post/275997-