১৬ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৫১

পটিয়ায় বখাটের হামলায় শিক্ষক আহত: বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক, বিচার দাবি শিক্ষকদের

 

শাবল দিয়ে আঘাত করে শিক্ষকের দুই হাত ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের পটিয়ার পূর্ব ডেঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করেছে। গত মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পর গতকাল বুধবার বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসেনি।
প্রাক্প্রাথমিকের (শিশু শ্রেণি) ১৩ শিক্ষার্থীর সবাই অনুপস্থিত ছিল। আর বিদ্যালয়ের ৯৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল মাত্র ৩২ জন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদা বেগম গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ভয়ে বিদ্যালয়ে আসেনি শিশুরা। তাদের সামনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সবাই আতঙ্কিত। একই কথা বলেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কামাল উদ্দিন।
গতকাল সকালে মেয়েকে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা অভিভাবক রীতা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভয়ে আজ মেয়ে স্কুলে আসতে চাচ্ছিল না। তাই সঙ্গে এলাম।’
গত মঙ্গলবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে পটিয়া উপজেলার দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নের পূর্ব ডেঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষিকা মিসফা সুলতানাকে লোহার শাবল দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন বখাটে আহসান উল্লাহ। এ সময় শিক্ষক আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে স্কুলের মাঠে চলে গেলে সেখানেও তাঁকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন আহসান।
শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে পটিয়া উপজেলা পরিষদের সামনে ‘সর্বস্তরের শিক্ষক সমাজ’-এর উদ্যোগে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। এতে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অন্তত দুই হাজার শিক্ষক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। বক্তারা বখাটে যুবকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবির পাশাপাশি বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দাবি করেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মোহছেনা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার। বক্তব্য দেন পটিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন খান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার মোহাম্মদ, পৌর মেয়র হারুনুর রশিদ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোতাহার বিল্লাহ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ নেয়ামত উল্লাহ, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কান্তি দে, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পটিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি স্বপন কান্তি নাথ, সদস্যসচিব দিল মোহাম্মদ, শিক্ষকনেতা মাহমুদুল হক প্রমুখ।
হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই শিক্ষকের বাবা নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে বখাটে আহসান উল্লাহকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নেয়ামত উল্লাহ বলেন, আসামিকে আদালতের মাধ্যমে গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (আজ) রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
শিক্ষক মিসফা সুলতানা চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের (চমেক) অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসাধীন। বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চন্দন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকের দুই হাত ভেঙে গেছে। তাঁর অস্ত্রোপচার লাগবে।
গতকাল হাসপাতালে শিক্ষককে দেখতে যান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা ও চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন।
আহসান উল্লাহর মা সখিনা বেগম (৬৫) বলেন, তাঁর ছেলে মাদকাসক্ত ছিলেন। গত নভেম্বর মাসে চট্টগ্রামের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ছেলেকে ভর্তি করান তাঁরা। সেখান থেকে কিছুদিন আগে বাড়ি ফিরে আসে। ছেলের এমন কাণ্ডে তিনি অনুতপ্ত। আহসানদের বাড়ি বিদ্যালয়টির পাশেই।
হামলায় আহত শিক্ষকের চিকিৎসা ও আইনগত সহায়তায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/