১৪ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:২৯

একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খুলনার বেসরকারি পাটকল

 

একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক সময়ের লাভজনক খুলনার বেসরকারি পাটকল। এতে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকারত্বের কবলে পড়ছে। পাটকল বন্ধক রেখে ব্যাংকের ঋণ নেয়া এবং পরে সেই টাকা দিয়ে অন্য ব্যবসা পরিচালনা করা, মিল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সঠিক তদারকির অভাবে এ দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
খুলনা পাট অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলায় সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে পাটকল রয়েছে ২৭টি। এর মধ্যে সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত আর বাকি ২১টি বেসরকারি পাটকল। বেসরকারি ২০টি পাটকলের মধ্যে সাতটি সম্পূর্ণরুপে বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া দু’টি পাটকল আংশিক বন্ধ রয়েছে।
বন্ধ থাকা পাটকলগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলবাড়িগেট মিরেরডাঙ্গা এলাকার এ্যাজাক্স জুট মিল, শিরোমনি এলাকার মহসেন জুট মিল, শিরোমনি বিসিক এলাকার জুট স্পিনার্স, ট্রান্সওসেন ফাইবার্স প্রসে: (বিডি), দিঘলিয়ার চন্দনী মহল এলাকার ইয়াসিন জুট মিল, দেয়াড়া এলাকার শাহনেওয়াজ জুট মিল ও স্পেশালাইজড। আর আংশিক বন্ধের তালিকায় রয়েছে সোনালী ও আফিল জুট মিল।
মহসেন : শিরোমনি শিল্পাঞ্চলের মহসেন জুট মিল ষাটের দশকে প্রায় ২০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। মিলটি দীর্ঘ ১৩ মাস লে-অফ থাকার পর গত ১৭ জুলাই মহসেন জুট মিলটি বন্ধ ও মিলের ৬৬৭ জন শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করে মিলকর্তৃপক্ষ। মিলটিতে প্রায় ৭০০ স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে। বর্তমানে মিলটি বন্ধ রয়েছে।
এ্যাজাক্স : ফুলবাড়ীগেট মিরেরডাঙ্গা শিল্পাঞ্চলের এ্যাজাক্স জুট মিল ষাটের দশকে ৮০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ্যাজাক্স জুট মিল দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। এ মিলটিতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক ছিল। বর্তমানে মিলের নয়া মালিক মিলটি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে শ্রমিকদের পূর্বের বকেয়া পরিশোধ করা শুরু করেছে। বন্ধের কাতারে রয়েছে শিরোমনি বিসিক এলাকার জুট স্পিনার্স, ট্রান্সওসেন ফাইবার্স প্রসে: (বিডি), দিঘলিয়ার চন্দনী মহল এলাকার ইয়াসিন জুট মিল, দেয়াড়া এলাকার শাহনেওয়াজ জুট মিল ও স্পেশালাইজড।
আফিল : আটরা-গিলাতলা শিল্পাঞ্চলের আফিল জুট মিল ষাটের দশকে ৫০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। আফিল জুট মিলটি কোনোরকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। মিলে হেসিয়ান বিভাগ বন্ধ করা হয়েছে।
সোনালী : ফুলবাড়ীগেট মিরেরডাঙ্গা শিল্পাঞ্চলের সোনালী জুট মিল ষাটের দশকে ৪৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। শিরোমনি শিল্পাঞ্চলের সোনালী জুট মিলটি কয়েক দফা বন্ধের পর বর্তমানে আংশিক চালু রাখা হয়েছে। মিলটিতে স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিল। বর্তমানে তার অর্ধেকও নেই।
সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি খাতের বড় পাটকল সোনালী জুট। এ মিলটি বড় ধরনের ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গত ২২ ফেব্রæয়ারি দুদক সোনালী জুট মিলের চেয়ারম্যানসহ চার সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৮৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে খানজাহান আলী থানায় মামলা করেছে। বর্তমানে মিলটির আংশিক চালু রয়েছে।
শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ না করে পাটকলগুলো বন্ধ রাখায় অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। বেকার হয়ে পড়েছে এসব মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
বেসরকারি পাট, সুতা, বস্ত্রকল সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ জানান, খুলনায় ২১টি বেসরকারি জুট মিলের মধ্যে বর্তমানে সাতটি বন্ধ ও দু’টি আংশিক চালু রয়েছে। পাটকলগুলো লাভজনক থাকা সত্তে¡ও মালিকরা বন্ধের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন, যেসব মিলে ঋণের ব্যাপার জড়িত, সেখানেই শুধু সমস্যা হচ্ছে। ঋণের কারণেই মহসেন ও এ্যাজাক্স পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। এ ছাড়া সোনালী ও আফিল জুট মিলের আংশিক বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মালিকপক্ষের খামখেয়ালির কারণে এসব মিলের হাজার হাজার শ্রমিক এখন বেকার। শ্রমিকদের বেকারত্ব দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এ শ্রমিকরা বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হতে পারে। এ কারণে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, অবিলম্বে বেসরকারি পাটকলগুলো চালু ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করা হলে দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিলের এমডি বলেন, মিল পরিচালনায় কর্তৃপক্ষের চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। তবে মিলগুলো ষাটের দশকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পুরাতন মেশিনারিজ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিলের উর্ধ্বগতি এবং শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন ও বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় মিল কর্তৃপক্ষকে লোকসানের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ফলে কিছু মিল বন্ধ হয়েছে। মিলগুলোর মেশিন বিএমআরই করা একান্ত প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
খুলনা পাট অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুর করিম বিশ্বাস জানান, পাটকলগুলো একসময়ে লাভজনক ছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ, মালিকের অবহেলাসহ নানা কারণে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের মুখে। তবে পাটকলগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে এগুলো পুনরায় লাভবান প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে।
- See more at: https://www.dailyinqilab.com/article/69312/%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%B9%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%96%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%95%E0%A6%B2#sthash.QBBEiIZM.dpuf