৩ জুন ২০১৭, শনিবার, ৫:৫৭

প্রস্তাবিত বাজেট অবাস্তব এবং জনগণের খরচ বাড়ানোর বাজেট

বর্তমান সরকারের পক্ষে এ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে দেশবাসী মনে করে

গত ১লা জুন জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন সে সম্পর্কে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদ আজ ৩ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে ৪ লক্ষ ২ শত ৬৬ কোটি টাকার যে উচ্চাকাংক্ষী ও ঘাটতি বাজেট পেশ করেছেন তা অবাস্তব এবং জনগণের খরচ বাড়ানোর বাজেট। ব্যাংক ঋণ ও বিদেশী সাহায্য নির্ভর এ বিশাল বাজেট নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য পেশ করা হলেও বর্তমান সরকারের পক্ষে এ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে দেশবাসী মনে করে।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট আয় ধারা হয়েছে ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ১২ হাজার ২ শত ৭৫ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মিটাতে অভ্যন্তরীণ খাত (ব্যাংক) থেকে ঋণ গ্রহণ করবে ২৮ হাজার ২ শত ৩ কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে ঋণ গ্রহণ করবে ৩২ হাজার ১ শত ৪৯ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করবে ৫১ হাজার ৮ শত কোটি টাকা। এর বাইরেও ঋণ সহায়তা নেয়া হবে ৫ হাজার ২২ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের ১০.৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে ঋণের সুদ পরিশোধ করা বাবদ। এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, প্রস্তাবিত বাজেট বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ নির্ভর।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ১৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করে ৫৪৯টি পণ্য ভ্যাটের আওতায় আনা হয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার ঠেকানোর কোন নির্দেশনা এ বাজেটে নেই। অপর দিকে সরকার ১৫% ভ্যাট আরোপ করে দরিদ্র লোকদের শোষণ করে তাদেরকে আরও দারিদ্র্যতার দিকে ঠেলে দেয়ার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করেছে। অধিক পরিমাণ ভ্যাট আরোপ করার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য আরো বাড়বে। সেই সাথে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়বে। বাজেটে মুদ্রাস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। প্রকৃত পক্ষে মুদ্রাস্ফীতি আরো বাড়বে।

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কষাঘাতে এমনিতেই জনগণ জর্জরিত। বাজেট ঘোষণার সাথে সাথেই চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়তে শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে মোটা চালের মূল্য সর্বাধিক। প্রস্তাবিত বাজেটের ফলে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, সরকারী-বেসরকারী চাকুরীজীবী এবং ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভ্যাটের এ বিরাট বোঝা দেশের দরিদ্র জনগণের মাথায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

রাজস্বখাত থেকে সরকার যে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর কোন নিশ্চয়তা নেই। ব্যাংকে কারো ১ লক্ষ টাকা জমা থাকলে সেখান থেকে সরকারকে ৮ শত টাকা আবগারী শুল্ক দিতে হবে। সরকারের এ নীতি সঞ্চয় বিরোধী। এ নীতি বাতিল করা উচিত। অর্থমন্ত্রী গত ২রা জুন বাজেটোত্তর এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘ব্যাংকে যাদের এক লক্ষ টাকা জমা আছে তারা সম্পদশালী’। আমি অর্থমন্ত্রীর এ অন্যায় ও অযৌক্তিক বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলতে চাই যে, এ কথা বলে তিনি দেশের নিম্ন আয়ের লোকদের সাথে উপহাস করেছেন। তার এ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।

সরকার করমুক্ত আয়ের সীমা গতবারের বাজেটের মতই আড়াই লক্ষ টাকা নির্ধারণ করেছে। বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আয়কর মুক্ত আয়ের সীমা আরো বৃদ্ধি করা উচিত ছিল। প্রস্তাবিত বাজেট বিনিয়োগ বান্ধব নয়।

বাজেটে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির টার্গেট ধরা হয়েছে ৭.৪ শতাংশ। গত বাজেটেও সরকারের জিডিপি’র লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হয়নি, এবারেও হবে না বলে জনগণ মনে করে। এ থেকেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সরকার উন্নয়নের যতই ঢাক-ঢোল পিটাক না কেন প্রকৃত পক্ষে দেশের অর্থনীতির কোন উন্নতি হয়নি। বরং অবনতিই হচ্ছে।

রপ্তানীকারকদের ৪৩ শতাংশ বাড়তি কর দিতে হবে এবং উৎস করও বাড়ছে। তাই ব্যবসায়ীগণ মনে করেন প্রস্তাবিত বাজেট ব্যবসা বান্ধব নয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে দাম বাড়বে শিশু খাদ্য, গুঁড়া দুধ, মাখন, তাজা ফল, মসলা, ভোজ্য তেল, গ্যাস, জ্বালানী তেল, ভার্নিস, প্রসাধনী; সুগন্ধী দ্রব্য, টয়লেট সামগ্রী, সাবান, মশার কয়েল, মশা মারার সামগ্রী, সিলিং ফ্যান, মোবাইল ফোনের সিম কার্ড, রঙিন টিভি ইত্যাদি পণ্যের। উল্লেখিত দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার গরীব জনগণের স্বার্থে আঘাত করেছে। উল্লেখিত দ্রব্য-সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। প্রস্তাবিত বাজেটে মটর সাইকেল ও হাইব্রিড গাড়ীর দাম কমানো হয়েছে, এগুলোর দাম না কমানোই উচিত ছিল।

প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা রেখে সরকার ঘুষ ও দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করেছে। এটা বাতিল হওয়া উচিত। বাজেটে দুর্নীতি করে সরকারী দলের লোকদের আরো সম্পদশালী হওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থ উপেক্ষা করে দলীয় লোকদের লালন-পালন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে জাতির ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না। এ বাজেটের ফলে দরিদ্র জনগণ আরো দরিদ্র হবে এবং দেশে ভূমিহীন, হতদরিদ্র লোকের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।

কাজেই দেশের শতকরা ৮০ ভাগ দরিদ্র লোকের স্বার্থের কথা চিন্তা করে ভ্যাট আরো কমিয়ে ব্যাংকে রাখা ১ লক্ষ টাকার উপর আরোপিত ৮ শত টাকা আবগারী শুল্ক প্রত্যাহার, করমুক্ত আয় সীমা আরো বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় যে সব দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে তা প্রত্যাহারসহ প্রস্তাবিত বাজেটের গণস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তগুলো বাতিল করে জনগণের স্বার্থের পক্ষে বাজেট প্রণয়ন করার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”