১০ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৭:১৬

ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ভারতকে খুশি করে শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকার হীন পন্থা অবলম্বন করেছেন

যে সব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে সেগুলো হুবহু প্রকাশ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে গত ৮ এপ্রিল তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি ছাড়াই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়সহ ২২টি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক ছাড়াও শোনা যাচ্ছে যে, ব্যবসায়ী ও বেসরকারী খাতের মধ্যে আরো ১৪টি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি এবং ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদ আজ ১০ এপ্রিল প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে বাংলাদেশের জনগণের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি না হওয়ায় জনগণ হতাশ হয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশের জনগণের ন্যায়সংগত অধিকার। ভারত তিস্তা ও গঙ্গা নদীসহ দু’দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি থেকে বাংলাদেশের জনগণকে দীর্ঘ দিন যাবত বঞ্চিত করে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পানি বণ্টন নীতি ও প্রথাকে ভারত সম্পূর্ণ রূপে অগ্রাহ্য করেছে। দেড় মাসের জন্য ফারাক্কা বাঁধ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করলেও এ পর্যন্ত ৪৩ বছরেও তাদের পরীক্ষা শেষ হয়নি। ভারত গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানি থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে একতরফাভাবে গঙ্গা ও তিস্তার পানি ব্যবহার করছে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে যে সব চুক্তি হয়েছে তা ভারত ও বাংলাদেশের সরকার প্রধানের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অথচ তিস্তার পানি বণ্টনের ইস্যুতে ভারত সরকারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। পানি ভাগ হবে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে নয়। সুতরাং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যেই অন্যান্য চুক্তির মত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিও সম্পন্ন হওয়ার কথা। অথচ তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্সা থেকে বঞ্চিত করার কূটকৌশল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির কথা জানিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে পানি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা হল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিনক্ষণ নির্ধারণ না করেই বলে দিয়েছেন যে, শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি হবে। ইতোপূর্বেও তিনি এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এ ধরনেরই আশ্বাস দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের জনগণ মনে করে এ আশ্বাস মূলতঃ পানি না দেয়ার একটি কূটকৌশল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, তিস্তায় পানি নেই। উত্তর বঙ্গের ৫ নদী থেকে তিনি পানি নেয়ার উপদেশ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি আন্তর্জাতিক পানি বণ্টন নীতি অবজ্ঞা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানি সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় বৃহত্তর রংপুর জেলার তিস্তাপাড়ের ভুক্তভোগী জনগণ হতাশ হয়েছে। তিস্তার পানি তাদের জীবন-মরণ সমস্যা। তিস্তার পানি না থাকায় ঐ অঞ্চলের ধরলা, ঘাঘট, দুধকুমার, বুড়ি তিস্তাসহ প্রায় ৩৩টি ছোট-বড় নদী ও শাখা খালগুলো ভরাট হয়ে ঐ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মওসুমে পানির অভাবে কৃষক ফসল ফলাতে পারছে না। আবার বর্ষা মওসুমে ভারত পানি ছেড়ে দেয়ায় বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের জনগণ। বাংলাদেশের জনগণ তিস্তা ও গঙ্গা নদীর পানিসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা চায়।

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের সেনাবাহিনী স্বাধীনতার অতন্ত্র প্রহরী। তাদেরকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার যে চেতনা দিয়ে গড়ে তোলা হতো তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় মূলতঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্বকেই দুর্বল করার অপকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে যে চুক্তি হয়েছে তাতে ভারতের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য ৫০ কোটি ডলারসহ ৫০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার চুক্তিতে বাংলাদেশের জনগণ খুশি হতে পারেনি। সকল চুক্তিগুলিই মূলতঃ বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। খুলনা থেকে কলিকাতা পর্যন্ত রেল ও সড়ক যোগাযোগের চুক্তিতে ভারতই বেশি লাভবান হবে। বাংলাদেশের জনগণ মনে করে এ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ভারতকে খুশি করে শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকার হীন পন্থা অবলম্বন করেছেন। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করলেও বাংলাদেশের সীমান্তে পাখির মত গুলি করে বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করা বন্ধ হবে না ও বাণিজ্য ঘাটতি কমবে না, বরং আরো বাড়াবে বলে বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকগণ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

এ চুক্তির মাধ্যমে ‘কারো প্রতি শত্রুতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্ব’-এ নীতি থেকে আওয়ামী জোট সরকার সরে এসেছে। সরকার দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ভারতের সাথে যে সব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। আমরা বাংলাদেশের জনগণ ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের স্বার্থে ভারতের সাথে যে সব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে সেগুলো হুবহু প্রকাশ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”