৬ মে ২০১১, শুক্রবার

ট্রেড ইউনিয়ন সভাপতি সম্মেলনে আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমাদ

সরকার জামায়াতকে বাদ রেখে অগনতান্ত্রিক আচরণ এবং সংবিধান সংশোধনের গ্রহন যোগ্যতা হারিয়েছে

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে ট্রেড ইউনিয়ন সভাপতি ও সেক্রেটারীদের সম্মেলন অদ্য ৬ই মে’ শুক্রবার সকাল ১০.০০ টায় আলফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জননেতা মকবুল আহমদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব মকবুল আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকার গঠনের সময় দেয়া ওয়াদা ভূলে গেছেন। বিনে পয়সায় সার, ঘরে ঘরে চাকুরী, ১০ টাকা কেজি চাল দেয়ার কথা রক্ষা করতে পারেননি। সাধারণ জনগনের কথা বলার অধিকার আজ নেই। দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতি চরম আকার ধারন করেছে। খুনের আসামীকে ছেড়ে দিয়ে হত্যা ও সন্ত্রাসকে উসকে দেয়া হয়েছে। শেয়ার কেলেঙ্কারীর মাধ্যমে মানুষকে পথে বসিয়েছে তদন্তের পরও বিচার হচ্ছে না। বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে হাস্যসকর করে তুলেছে। তিনি বলেন, সরকার অত্যন্ত ন্যাককারজনক ভাবে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে রিমান্ডের পর রিমান্ডে নিয়েও কিছু বের করতে না পেরে পুনরায় রিমান্ডের নিয়ে মিথ্যা তথ্য আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারী মদদে আইন বহির্ভূত হত্যা.গুম ও নির্যাতন চলছে। জনাব মকবুল আহমদ বলেন, আওয়ামীলীগের সোনার ছেেেলদের অন্তর্কলহে সরকার আজ দিশে হারা। টেন্ডারবাজী চাঁদাবাজী ও ভর্তি বানিজ্যের টাকা ভাগাভাগি করতে গিয়ে বিগত দুই বছরে তারা ২০০ জনের অধিক নিজেদের কর্মীকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, এমতাবস্থায় মানুষের দৃষ্টিকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য ৪০ বছর আগের মিমাংসিত বিষয়কে ইস্যূ বানিয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সুতরাং বলা যায়, সকল ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এবং ভারতের গোলামীতে দেশবাসীকে আবদ্ধ করার জন্য যুদ্ধাপরাধ ইস্যু তৈরী করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে নারী নীতি ও ফতোয়া বিষয়ে সরকারের ইসলাম বিরোধী চরিত্র প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আসলে ধোঁকার রাজনীতি যারা করতে চান তারা ধর্ম বর্জন করতে চান। রাসূল (সঃ) এর রাষ্ট্রে ৫০% এর বেশী অমুসলিম ছিল সেখানে তারা পূর্ণ অধিকার ভোগ করেছেন। সরকার সংবিধান সংশোধনে জামায়াতকে বাদ রেখে অগনতান্ত্রিক আচরণ এবং সংবিধান সংশোধনের গ্রহন যোগ্যতা হারিয়েছে। জনাব মকবুল আহমদ বলেন, আওয়ামীলীগ ছাড়া কাউকে চাকুরী দেবে না এটা কি ধরনের গণতন্ত্র? আপকি কি আওয়ামীলীগের সরকার না জনগনের? আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে কোন কিছুই আন্তর্জাতিক শব্দ ছাড়া কোন কিছুই মানের নেই। তিনি সরকারকে মিশর, তিউনেশিয়া এবং লিবিয়ার পরিনতি থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য আহবান জানান।

তিনি বলেন, শ্রমিক মালিক সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন যথাযথ নিয়ম রক্ষা করে টিকিয়ে রাখতে হবে। শ্রমিকরা নিজেদের কল্যাণ চাইলে ইসলামের দিকে ফিরে আসতে হবে। তিনি সকলকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গন-আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিবাদি সরকারের পতন ঘটানোর জন্য উদাত্ত আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রমিক কল্যাণের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার-সাবেক এম.পি বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন একটি ব্যতিক্রমধর্মী শ্রমিক সংগঠন। বামপন্থীগন মালিক শ্রমিক পরস্পরের শত্র“ হিসেবে চিহিনত করে যে শ্রেনী সংগ্রামের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন তার অবসান ঘটিয়ে মালিক শ্রমিক ভাই, ভাই উৎপাদনের বিকল্প নেই এ ধারণার শ্রমজীবী মানুষের মাঝে সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সকল প্রকার তৎপরতায় ইসলামী আদর্শের ছাপ থাকতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের মাধ্যমেই শ্রমিজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার তথা ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন সম্ভব। তিনি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তির আন্দোলন জোরদার করার আহবান জানান।

সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, সহ-সাধারণ সম্পাদক- সর্বজনাব কবির আহমদ, আব্দুল মালেক, মজিবুর রহমান ভুইয়া, মোহাম্মদ উল্লাহ, মাষ্টার শফিকুল আলম ও মোঃ ফখরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসাইন, অফিস সম্পাদক মানসুর রহমান, চাতাল শ্রমিক ইউনিয়ন সেক্রেটারী খান গোলাম রসুল, ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক তানভির হোসাইন, রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের সভাপতি এ.বি.এম এহতেশাম উদ্দীন, টি.এন্ড.টি আদর্শ ফেডারেল ইউনিয়ন সভাপতি মহির উদ্দীন, শ্রমিক নেতা আবু তাহের খান, চট্টগ্রাম বন্দর ইসলামী শ্রমিক সংঘের কাজী জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম দোকান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি লুৎফর রহমান, আব্দুল খালেক হাওলাদার প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

সম্মেলনে অবিলম্বে শ্রমিক নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমানসহ সকল নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি, সর্বস্তরের শ্রমিকদের ন্যনতম মজুরী ৫০০০/- টাকা ধার্য, দ্রব্য মূল্যের উর্ধোগতি রোধ ইত্যাদির দাবী জানিয়ে প্রস্তাবলী গৃহীত হয়।