১৩ মে ২০১৬, শুক্রবার

শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (রহ.)-এর দোয়া মাহফিলে আমীরে জামায়াত

ফাঁসি বা মৃত্যুতে পেরেসান না হয়ে সাহসের সাথে এগিয়ে যেতে হবে -মকবুল আহমাদ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ বলেছেন, আমীরে জামায়াত শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন একজন একনিষ্ঠ আল্লাহওয়ালা মানুষ। তিনি ৫ বছর ২টি মন্ত্রণালয় চালালেও তার আদর্শবিরোধীরা তার বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি। তিনি স্বচ্ছ চিন্তার লোক ছিলেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও প্রাণভিক্ষার সামান্য চিন্তাও তাকে স্পর্শ করেনি বরং সন্তষ্ট চিত্তে ও আল্লাহর সন্তষ্টির জন্যে হাসিমুখে শাহাদাতকে বরণ করে নিয়েছেন। যা আমাদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। তাই ফাঁসি বা মৃত্যুতে পেরেসান না হয়ে শহীদ মতিউর রহমান নিজামীর অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর শাহাদাত কবুল করে জান্নাতের উচ্চমর্যাদা দানের জন্য দোয়া করেন।

তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তে আমীরে জামায়াত শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর জন্য কেন্দ্র ঘোষিত দোয়া কর্মসূচীর অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম ঢাকা মহানগরী আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল। উপস্থিত ছিলেন সদ্য কারামুক্ত সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ঢাকা মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ইবনে কারীম আহমদ মিঠু ও মাওলানা ফরিদুল ইসলাম প্রমূখ।

ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, ফাঁসির মঞ্চের মুখোমুখি হয়ে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর দৃঢ়তা ও আপোষহীনতা তাকে মর্যাদার উচ্চাসনে অভিষিক্ত করেছে। তার প্রতি ফোটা রক্ত বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনে নব উদ্দমের সৃষ্টি ও গতিশীলতা দিয়েছে। মূলত তিনি ছিলেন বিশ্বখ্যাত আলেমে দ্বীন ও ইসলামী আন্দোলনের অকুতোভয় সিপাহসালার। তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৫শ ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে অন্যতম। মূলত এতেই তার পান্ডিত্য ও উচ্চ মর্যাদার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি উত্তম ও বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। সরকার তার ব্যক্তিত্ব, আদর্শ ও জনপ্রিয়তায় ঈশ্বার্নিত হয়ে কথিত বিচারের নামে প্রসহন করে একজন বরেণ্য জাতীয় নেতা ও খ্যাতিমান আলেমে দ্বীনকে হত্যা করেছে। কিন্তু হত্যা করে ইসলামী আন্দোলন অতীতে নিমর্ূূল করা যায়নি, আর কখনো যাবেও না।

তিনি বলেন, মহল বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের সাথে জুড়িয়ে দেয়। কিন্তু মাওলানা নিজামী তার পান্ডিত্যপূর্ণ লেখনীর মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন ইসলামের সাথে সন্ত্রাসবাদের দুরতম সম্পর্ক নেই। মূলত ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা ও ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকলের জন্য একটি কল্যাণকামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সরকার পরিকল্পিতভাবেই দেশের ইসলামী ব্যক্তিত্বদের বিশেষভাবে টার্গেট করেছে। সে ধারাবাহিকতায় একের পর এক হত্যা করা হচ্ছে জাতীয় নেতাদের। মূলত সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই আমীরে জামায়াতসহ শীর্ষনেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দিয়ে বরেণ্য জাতীয় নেতাদের হত্যা করছে।

তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলনের উপর জুলুম-নির্যাতন ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। তাই যেকোন প্রতিকুল পরিস্থিতি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে ধৈর্য্য ও সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে। আল্লাহর সাহায্য নিয়ে অকুতোভয় সৈনিকের মত ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শহীদানের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করতে হবে। আর একাজ আমাদেরকে জীবনের শেষ মহুর্ত পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলেই শহীদ আমীরে জামায়াতসহ শহীদানের আত্মত্যাগ ও রক্ত সার্থক হয়ে উঠবে।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই ইসলামী আন্দোলনের সিপাহসালার, খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ও আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা শহীদানের রক্ত কোনভাবেই বৃথা যেতে দেবে না বরং দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শহীদদের রক্তের বদলা নেয়া হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, শহীদ আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সানন্দে ও হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। তিনি ছিলেন উচুমানের দাঈ ইলাল্লাহ ও মুবাল্লিগে দ্বীন এবং ইসলাম সিংহ পুরুষ। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার কন্ঠ। তিনি তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে ইসলামের আদর্শ মানুষের মাঝে উচ্চকিত করে তুলেছেন। কিন্তু সরকার তাকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে হত্যা করেছে। তাই আমাদেরকে তার রেখে যাওয়া কাজকে এগিয়ে নিতে হবে।